এ্যান্টনি অপু: যশোর শহরজুড়ে তারের জটলা নতুন কিছু নয়। সড়ক, ফুটপাত কিংবা বাসাবাড়ি ঘেঁষে বিদ্যুতের খুঁটি ও ল্যাম্পপোস্টে যেনতেনভাবে ঝুলে থাকা বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও ডিস লাইনের ঝুঁকিপূর্ণ তার নিয়ে জনমনে উদ্বেগ থাকলেও সমাধানে উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্টদের। বিদ্যুৎ বিভাগের ভাষ্য, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে ইন্টারনেট লাইন ও ডিস লাইনের তার সরিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের বলা হলেও তারা শোনেনি। ফলে জনগণের ঝুঁকি জেনেও তাদের চুপচাপ থাকতে হচ্ছে। অথচ বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ভর করে বাণিজ্য করে যাচ্ছেন ইন্টারনেট ও ডিস লাইন ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে যশোর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে দেখা যায়, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে এবং বড় বড় স্থাপনা ও ভবনে ঝুলছে তারের জটলা। অনেক ক্ষেত্রে বোঝার উপায় থাকে না, কোনটি বৈদ্যুতিক তার এবং কোনটি ডিস বা ইন্টারনেট লাইনের তার।
শহরের, আরএন রোড, চৌরাস্তা, দড়াটানা, বড় বাজার, চিত্রার মোড়, গাড়িখানাসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতেও চলার পথে উপরের দিকে তাকালেই দেখা মেলে এ সব তারের জটলা। এ সব তারের জটলার কারণে ইলেট্রিক শর্ট সার্কিট হয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। নষ্ট হচ্ছে বাসা বাড়ি, অফিস, ভবনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি। সম্প্রতি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে শহরের দড়াটানা মোড়ে একটি বেকারি এবং নিউমার্কেটে একটি বাসাবাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে কোন প্রাণহানি না হলেও ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির মালামাল পুড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বেজপাড়ার বাবুল বলেন, শহরের মধ্যে দিয়ে যখন চলাচল করি, তখন উপরের দিকে তাকালে নিজেদেরই ভয় লাগে। না জানি কখন তার খুলে গায়ের উপর পড়ে। একটা পোলের সাথে আরেকটি পোলের তার পেঁচিয়ে জগাখিচুড়ি অবস্থা।
জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে ইচ্ছামতো একাধিক তারে বিদ্যুৎ সংযোগ নিচ্ছে অসাধু চক্র। এর সাথে ডিস এবং ইন্টারনেটের লাইনের তার তো আছেই। তাদের তো নিজস্ব কোন খুঁটি নেই। যেকারণে তারাও বৈদ্যুতিক খুঁটিকে ব্যবহার করছে। আর এক একটা বৈদ্যুতিক খুঁটিতে একাধিক তারের জটলার কারণে ওভারলোড হয়ে গিয়ে খুঁটি পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এগুলোকে একটি সুষ্ঠু বিতরণ ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসলে মানুষ ঝুঁকিমুক্ত থাকবে। কিন্তু কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার দৃশ্যমান কোন নজির নেই।
শ্রমিক নেতা মাহবুবুর রহমান মজনু বলেন, আমরা প্রায়ই সময় পত্র-পত্রিকায় দেখি যে যশোর শহরের বিভিন্ন জায়গায় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শহরের বিদুৎ ব্যবস্থাপনার উন্নতি না করা গেলে এই জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি যে সিলেট শহরে এখন মাটির নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন নেওয়া হয়েছে। যেটি অত্যন্ত চমকপ্রদ এবং নিরাপদ বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা বলা যায়। আমরা চাই অচিরেই এই আন্ডারগ্রাউন্ড ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই সিস্টেম আমাদের যশোর শহরেও বাস্তবায়ন করা হোক। তাহলে যেমন দুর্ঘটনার মাত্রা কমে যাবে। তেমনি মানুষের জীবনযাত্রার মান বদলে যাবে। যশোর একটি মডেল শহরে রূপান্তরিত হবে। তবে যশোর শহরেও আন্ডারগ্রাউন্ড বৈদ্যুতিক লাইন করে বৈদ্যুতিক তার বিহীন মডেল শহর তৈরির সম্ভাবতা যাচাইয়ের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
যশোর ওজোপাডিকোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইখতিয়ার উদ্দীন বলেন, আমরা একাধিকবার ডিস এবং ইন্টারনেট লাইনের তার আমাদের বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে অপসারণের জন্য বলেছি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা অপসারণ করেনি। এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিলে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। আমারা বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে থাকি গ্রাহকের মিটার পর্যন্ত। এরপর সেখান থেকে গ্রাহক ওয়ারিং করিয়ে নেয়। নিম্ন মানের বৈদ্যুতিক সামগ্রি ব্যবহার করে ওয়ারিং করলে শর্ট সার্কিটের কারণে অগ্নিকাণ্ডসহ নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে আমরা গ্রাহকদের সতর্ক করে আসছি।
তিনি আরও বলেন, মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন নেওয়া গেলে যশোরবাসী উপকৃত হবে। ইতিমধ্যে যশোর শহরে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ সিস্টেম চালু করার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। এ প্রজেক্টটি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।
আরও পড়ুন: মণিরামপুরে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুই যুবক নিহত