ক্রীড়া ডেস্ক : ২০২২ কাতার বিশ্বকাপেও তেমন কয়েকজন তরুণ তুর্কি খেলতে যাচ্ছেন নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ। এদের মধ্যে অনেকেরই সামর্থ্য আছে সেরাদের সেরা হওয়ার। কয়েকজন তো ক্লাব ফুটবলে ইতোমধ্যেই আলো ছড়িয়েছেন।
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে কিলিয়ান এমবাপ্পে কিংবা ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে মারিও গোটজে, ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে টমাস মুলার আর ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে লিওনেল মেসি, নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নেমেই তাক লাগিয়ে দেয়া খেলোয়াড়ের তালিকা করতে গেলে সেটি বেশ লম্বাই হবে। ইতিহাস বলে, দুই-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলা বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই পরবর্তীতে নিজেদের নিয়ে গেছেন অসীম উচ্চতায়।
২০২২ কাতার বিশ্বকাপেও তেমন কয়েকজন তরুণ তুর্কি খেলতে যাচ্ছেন নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ। এদের মধ্যে অনেকেরই সামর্থ্য আছে সেরাদের সেরা হওয়ার। কয়েকজন তো ক্লাব ফুটবলে ইতোমধ্যেই আলো ছড়িয়েছেন।
নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া তেমনই ৫ জনকে নিয়ে এই আয়োজন। এই ৫ জনই তাদের নিজ নিজ দলের অন্যতম বড় ভরসার জায়গা, যেখানে কারোরই বয়স ২০ এর বেশি নয়!
জুড বেলিংহ্যামকে নিয়ে প্রত্যাশার পারদ আকাশচুম্বী ইংলিশ ভক্তদের। আর সেটা হবেই বা না কেন? বয়সের কোঠা ১৯ না ছুঁতেই যেসব রেকর্ড করে বসে আছেন তাতে বেলিংহ্যামকে নিয়ে ভরসা করতেই পারেন ইংলিশ ম্যানেজার গ্যারেথ সাউথগেট। জার্মান ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিয়মিত দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন বেলিংহ্যাম। লিভারপুল, রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাব লেগে আছে তার পেছনে। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের মাঝমাঠে সাউথগেটের তুরুপের তাস বেলিংহ্যাম।
বয়স মাত্রই ১৮, তবে খেলা দেখে বোঝার উপায় নেই মোটেও। একইসাথে জার্মান ও ইংলিশ নাগরিক হওয়ায় জাতীয় দল হিসেবে একটিকে বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিলো মুসিয়ালার সামনে। জার্মানিকে বেছে নিয়ে যে ভুল করেননি সেটি জার্মান বিশ্বকাপ দলে ডাক পাওয়া দিয়েই প্রমাণিত। বায়ার্ন মিউনিখের ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ১০০ ম্যাচ খেলার রেকর্ড করেছেন কদিন আগেই। বিশ্বকাপে জার্মান কোচ হানসি ফ্লিকের অস্ত্রভান্ডারের অন্যতম সেরা অস্ত্র এই মিডফিল্ডার।
বায়ার্ন মিউনিখে মুসিয়ালার সতীর্থ ডেভিসের উত্থানের গল্প হার মানাবে যে কোনো রূপকথাকেই। রিফিউজি ক্যাম্প থেকে উঠে এসে কাতার বিশ্বকাপের মঞ্চে এখন ডেভিস! ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে নিজের প্রথম কয়েক মৌসুমেই যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন ডেভিস তাতে তার অনেক দূর যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ক্লাব বায়ার্নে লেফট উইং ব্যাক হিসেবে খেললেও কানাডার হয়ে মাঝামাঠেও খেলেন ডেভিস। বিশ্ব ফুটবলের সবথেকে দ্রুতগতির ফুটবলারদের একজন ডেভিস। নিজেদের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া কানাডার সাফল্যর অনেকটাই নির্ভর করছে ২২ বছর বয়সী আলফন্সো ডেভিসের পারফরম্যান্সের উপর।
ডেভিসের মতোই আরেক রূপকথার গল্প লিখা যাবে কামাভিঙ্গাকে নিয়েও। রিফিউজি ক্যাম্পে জন্ম নেয়া এই ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডারকে পরবর্তী প্রজন্মের অন্যতম সেরা প্রতিভা হিসেবে ধরা হয়। এবারই নিজের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া কামাভিঙ্গার জন্য চ্যালেঞ্জটা বড় হয়ে উঠেছে দুই ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডার এনগোলো কান্তে এবং পল পগবার চোটজনিত অনুপস্থিতির জন্য। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আলো ছড়িয়েছেন কামাভিঙ্গা, জিতেছেনও ক্লাব ফুটবলের সবথেকে বড় শিরোপাটি। এবার নিশ্চয়ই ফুটবলেরই সবথেকে বড় আসরের ট্রফিকে পাখির চোখ করছেন ১৯ বছর বয়সী এই ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডার।
আর্জেন্টাইন ঘরোয়া লীগে এক ম্যাচে ৬ গোল করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বকে। এর পরপরই তাকে ম্যানচেস্টার সিটিতে নিয়ে আসেন পেপ গার্দিওলা। গার্দিওলার পাকা জহুরির চোখ যিনি ভেদ করতে পেরেছেন তিনি নিশ্চয়ই সাধারণ কেউ হবেন না। ২২ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার হুলিয়ান আলভারেজের সামর্থ্য আছে বিশ্বকাপে নিজের প্রতিভার ছাপ রাখার। লাউতারো মার্টিনেজ, লিওনেল মেসি, আনহেল ডি মারিয়ার মতো মহাতারকাদের সাথে খেলতে পারাটা আলভারেজের জন্য বড় সৌভাগ্যের। এত তারকার ভিড়ে নিজের নামটা যদি আলাদা করে দেখাতে পারেন, আলভারেজের সাথে সাথে দীর্ঘদিনের অপেক্ষা ঘুচতে পারে আর্জেন্টিনারও।