নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ রেড ক্রিকেট সোসাইটি যশোর ইউনিটের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিক্রির ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখা, ভোটার তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম থাকাসহ নানা অসংগতি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আসাদুজামান মিঠু।
সোমবার সকালে প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে লিখিত বক্তব্যে মিঠু বলেন, রেড ক্রিসেন্ট মূলনীতি হিসেবে মানবতা, পক্ষপাতহীনতা, নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা, স্বেচ্ছামূলক, সেবা, একতা ও সার্বজনীনতা। অথচ যশোর রেডক্রিসেন্ট ইউনিটের নির্বাহী নেতৃত্বের দ্বারা এসব মূলনীতি পদদলিত করা হয়েছে।
নামকাওয়াস্তে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হলেও মূলত নির্বাচনের কথা কেউ জানতেও পারতেন না। যদি আমি শেষ মুহূর্তে প্রার্থী না হতাম। কারণ, রাতের আঁধারে আবারো কমিটিকে নিজের পকেটে ভরার সকল আয়োজন অতি গোপনে সম্পন্ন করা হয়েছিল।
২৪ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার যশোর আগমন ঘিরে যখন প্রশাসন, রাজনৈতিক অঙ্গন, মিডিয়া তথা গোটা যশোর তুমুল ব্যস্ত সময় পার করছে তখনই তফসিল ঘোষণা করা হয়। অবাক করার বিষয় ১৫ নভেম্বর ঘোষিত নির্বাচনী তফসিলের চিঠি ডাকযোগে পাঠানো হয় ২২ নভেম্বর। আরও অবাক করার বিষয় হচ্ছে ডাকযোগে পাঠানো খামে ছিল না কোন চিঠি। আমার ধারণা আমার মতো অনেকে প্রতারণা শিকার হয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি যশোর ইউনিটের নির্বাচন নিয়ে কি নোংরা খেলা হয়েছে তা কল্পনাও করার মতো না। ভোটার তালিকা দীর্ঘ দেখাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন মৃত ব্যক্তিকে ভোটার দেখানো হয়েছে।
সাবেক এমপি শাহ হাদিজ্জামান (ভোটার নং ১০৯), সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট খাঁন টিপু সুলতান ( ভোটার নং ১৫৫), অ্যাডভোকেট কাজী আব্দুস শহীদ লাল (ভোটার নং ৬৭), আলী আকবর, রমেন্দ্রনাথ মন্ডলসহ অন্তত পঞ্চাশজন মৃত ব্যক্তিকে ভোটার তালিকায় রাখা হয়েছে। এধরণের ধৃষ্টতা ইতিপূর্বে যশোরের কোন প্রতিষ্ঠানের কখনো দেখা যায়নি। শুধু তাই নয়, এই ডিজিটাল যুগেও রেড ক্রিসেন্টের মতো প্রতিষ্ঠানে কোনো ভোটার তালিকায় কোনো ভোটারের মোবাইল কিংবা টেলিফোন নাম্বার রাখা হয়নি।
অধিকাংশ ঠিকানা সঠিকভাবে লেখা নেই। এমনকি দুইজন ভোটার মুসলিম হলেও তাদের পিতার নাম হিন্দু দেখানো হয়েছে। এ ধরনের হাজারো অসংগতি অন্যায় অবিচার আর অনিয়মকে পূঁজি করেই ব্যক্তি বিশেষ ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে দীর্ঘদিন ধরে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পরিচালনা করছেন। এসব অনিয়ম, অসঙ্গতি দূর হওয়া দরকার বলে মনে করি।
ভোটের চারদিন বাকি থাকায় আর ভোটার তালিকায় মোবাইল নম্বরসহ পুরো ঠিকানা না থাকায় ৭০০ ভোটারের কাছে পৌঁছাতে পারবেন না বলে জানান মিঠু। এই জন্য সকলকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন এই রাজনৈতিক, সামাজিক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জীবন সদস্য এজেএম সালেক বলেন, মনোনয়নপত্র বিক্রির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছে। একটি পক্ষ নিজেদের পছন্দের বাইরে মনোনয়ন কিনতে দেয়নি। ৭টি পদের বিপরীতে মাত্র ৮টি মনোনয়নপত্র বিক্রি করা হয়েছে। মিঠু ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে মনোনয়নপত্র কিনেছে।
তবে এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নির্বাচন কমিশনার অ্যাড. শাহরিয়ার বাবু। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনারের ক্ষমতা সীমিত। আমাদের অত ক্ষমতা নেই যে কেউ মনোনয়নপত্র চাইলে দিবো না।
তবে ভোটার তালিকায় কিছু অসংগতি আছে তা আমাদেরও চোখে পড়েছে। কিন্তু ভোটার তালিকা থেকে কাউকে আমরা বাদ দিতে পারি না। আমরা খসড়া ভোটার তালিকা দিয়েছিলাম। কেউ আপত্তি না করায় ওই তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রেডক্রিসেন্ট যশোর ইউনিটের ২০২৩-২০২৫ ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে আগামী ১ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে ইতিমধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান পদে শহিদুল ইসলাম মিলন, সদস্য পদে খন্দকার মাহফুজুল হক ফারুক, অ্যাড. গাজী আবদুল কাদের, মুস্তাক হোসেন শিম্বা, আক্তারুজ্জামান তুহিন ও মাহমুদ হাসান বিপু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। শুধুমাত্র সাধারণ সম্পাদক পদে ভোটগ্রহণ করা হবে।