কল্যাণ ডেস্ক: চলতি বছর আরব রিডিং চ্যালেঞ্জে শাম আল-বাকুর নামের সাত বছর বয়সী সিরিয়ান শিক্ষার্থী চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এতে এ শিশুটি এক মিলিয়ন দিরহাম (প্রায় দুই কোটি ৭৪ লাখ টাকা) পুরস্কার পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুবাইয়ের ওপেরায় অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন আরব আমিরাতের উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ বিন রাশিদ আল-মাকতুম।
আরবিভাষী শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠের অভ্যাস গড়তে ২০১৫ সাল থেকে আরব রিডিং চ্যালেঞ্জ শুরু হয়। আরব রিডিং চ্যালেঞ্জের ষষ্ঠ পর্বে অংশ নিয়েছে ৪৪টি দেশের প্রায় দুই কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী। এবারই প্রথম রেকর্ডসংখ্যক পাঠক এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
আরবি ভাষা সংরক্ষণে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এগিয়ে আসার আশা ব্যক্ত করে শেখ মুহাম্মদ বিন রাশিদ বলেন, আরব বিশ্বে সবচেয়ে বড় জ্ঞান আন্দোলন তৈরিতে সফল হয়েছে আরব রিডিং চ্যালেঞ্জ। তরুণদের মনকে আলোকিত করতে শিশুদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়েছে। আরব তরুণদের জন্য আমিরাতের সবচেয়ে বড় উপহার আরব রিডিং চ্যালেঞ্জ। কারণ, বই পাঠ ভবিষ্যতের উন্নতির চাবিকাঠি।
সিরিয়ান শিক্ষার্থী শাম আল-বাকুরের জীবন দুঃখ-কষ্ট ও প্রিয়জনদের হারানোর বেদনায় ভরপুর। ২০১৫ সালে সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে গৃহযুদ্ধ চলাকালে ভয়াবহ ক্ষেপাণাস্ত্র হামলায় নিহত হন তার বাবা। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় শাম ও তার মা। তখন শামের বয়স ছিল সাত মাস।
তার মা মানাল মাতার বলেন, আমি তাকে সহযোগিতার পাশপাশি আমার পরিবার ও তার বাবার পরিবারকেও সহযোগিতা করি। তার মধ্যে আমি মুখস্ত করার আগ্রহ লক্ষ্য করি। তিন বছর বয়স থেকে সে পবিত্র কোরআনসহ যেকোনো বিষয়ই মুখস্ত রাখতে পারে। ঘরে এবং স্কুলে সে শিশুদের অনুপ্রেরণার উৎস। তার অন্য ভাইয়েরা তার বই পড়া থেকে শেখার অপেক্ষায় থাকে। এমনকি সহপাঠীরাও তাকে দেখে উৎসাহিত হয়। এ ধরনের পাঠ প্রতিযোগিতা ভবিষ্যত প্রজন্মকে গড়তে সহযোগিতা করবে, যারা সিরিয়া পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখবে।
বিপুল পরিমাণ অর্থ পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মাতার বলেন, মূলত শিশুকাল থেকে বইপাঠের অভ্যাস গড়া উচিত। পুরস্কারের অর্থ নিয়ে আমাদের বড় কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা শামকে আরো যোগ্যতর করে গড়তে চাই। সেই আমাদের ভবিষ্যতের বিনিয়োগ।
চ্যাম্পিয়ন হয়ে শাম বলেন, রিডিং চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। আমার বন্ধু-বান্ধব ও তরুণদের পড়তে বলব। কারণ বই পাঠ মন ও আত্মার খোরাক যোগায়। বই পড়ে আপনি নানা স্থানে ঘুরতে পারবেন। প্রতিটি গল্প আপনাকে নতুন স্থানের নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে।
আরব রিডিং চ্যালেঞ্জে প্রথম স্থান অধিকার করে এক লাখ দিরহাম পেয়েছে সাত বছর বয়সী সিরিয়ান শিক্ষার্থী শাম আল-বাকুর। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এক লাখ দিরহাম পেয়েছে তিউনিসিয়ার আদম আল-কাসিমি এবং তৃতীয় হয়ে ৭০ হাজার দিরহার পেয়েছে জর্দানের রাশিদ আল-খাতিব।
এতে ২৬টি অনারব দেশ বাছাই করে কমিউনিটি চ্যাম্পিয়ন তিনজনকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এতে কমিউনিটি চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এক লাখ দিরহার পুরস্কার পেয়েছে বেলজিয়ামে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী নাদা আল সাতরি। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ৭০ হাজার দিরহার পুরস্কার পেয়েছে মরক্কো বংশোদ্ভূত স্পেনের প্রতিনিধিত্বকারী মারোয়া আল-বাকরি ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে ৩০ হাজার দিরহার পুরস্কার পেয়েছে অস্ট্রিয়ার নাদিয়া আল বাহনাসি।
তা ছাড়া ৯২ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মরক্কোর আল মোখতার গাজউলিত স্কুলকে ১০ লাখ দিরহাম, সৌদি আরবের আল-তারবিয়াহ আল-আহলিয়াহ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে পাঁচ লাখ দিরহাম এবং তিন লাখ দিরহাম সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হয় বাহরাইনের আল-আহেদ আল-জাহের উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়কে।
আরও পড়ুন: ‘পাগলা গারদে’ চোখাচোখি থেকে প্রেম, বিয়েতে আসলেন মন্ত্রীও